হাঁটুর বাতব্যথা-হাঁটু ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

অনেক দিন শরীরে ব্যথা থাকলে তাকে অনেকে বাতব্যথা বলে থাকেন। কথাটা কিন্তু মিথ্যা নয়। আমরা ডাক্তারি বিদ্যায় এটাকে রিউমেটিক পেইন বলে থাকি। তবে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে এটা বাতব্যথা নামেই পরিচিত। সন্ধিবাত বা জোড়াব্যথা জীবনে হয়নি এমন মানুষ খুব কম। এ ধরনের বাতব্যথা সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়, তবে কম বয়সীরাও অনেক সময় এ রোগে ভুগে থাকে।
Table of Contents
হাঁটু ব্যথার কারণ
হাঁটু ব্যথার অনেক কারণ আছে। যেমন-আঘাতজনিত হাঁটু ব্যথা, বাতজনিত হাঁটু ব্যথা, জীবাণু সংক্রমণজনিত ব্যথা ইত্যাদি। এখানে হাঁটুর অস্থিসংযোগের ক্ষয়জনিত রোগ বা অস্টিওআর্থ্রোসিস নিয়ে আলোচনা করব, যা বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সবাইকে পেয়ে বসে।
উপসর্গগুলো হলো
- হাঁটুর অস্থিসংযোগে ব্যথা। এ ব্যথা প্রথমে অল্প থেকে শুরু হয় এবং ক্রমেই তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- হাঁটুর অস্থিসংযোগে সকালে শক্তভাবে দেখা দেয় এবং এ কারণে অনেক সময় হাঁটু নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয় অথবা কাজ করলে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। তবে এই শক্তভাব সাধারণত এক ঘন্টার কম থাকে।
- হাঁটুর অস্থিসংযোগে দুর্বলতা বা জোর না পাওয়ার অনুভূতি হয়।
- প্রাত্যহিক কাজ, যেমন-সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, বাথরুমে বসা, রান্না করা ইত্যাদিতে হাঁটুর অস্থিসংযোগের ব্যথা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে কাজের মধ্যে যে নড়াচড়া করা হয় তাতেও ব্যথা বেড়ে যায়।
- অনেক সময় ব্যথার সাথে প্রদাহ হতে পারে। এই প্রদাহ হলে হাঁটু কিছুটা ফুলে যায়।
চিকিৎসা
- ব্যথা উপশমকারী ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল উত্তম। কোনো কোনো ক্ষেতে ইনডোম্যাথাসিন, ডাইক্লোফেন্যাক, আইবুপ্রোফেন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দেয়া হয়ে থাকে। ব্যথা থাকা অবস্থায় মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ
যেমন-ডায়াজিপাম দেয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের
পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়মে ওষুধ খেতে হবে। - হাঁটুর অস্থিসংযোগে স্টেরয়েড ওষুধ ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা
অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ ইনজেকশন প্রয়োগ করা উচিত। - বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকেরা প্রয়োগ করে থাকেন,
যেমন-শর্টওয়েভ থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি ইত্যাদি। রোগীর কোন অবস্থায় এসব থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেন। তবে গ্রামে বসে আপনারা অল্প গরম পানির মধ্যে গামছা ভিজিয়ে হাঁটুতে সেঁক নেবেন, দেখবেন খুব ভালো লাগবে। - হাঁটুর অস্থিসংযোগের এ রোগে বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম চিকিৎসা হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। যেমন-আইসোমেট্রিক কোয়াড্রিসেপ মাসলস এক্সারসাইজ, নি এক্সটেনশন এক্সরসাইজ, আরও এম এক্সারসাইজ ইত্যাদি। তবে বেশি ব্যথা থাকলে কোনো ব্যায়াম করা যাবে না, বরং বিশ্রাম নিতে হবে।
- হাঁটুর অস্থিসংযোগে ব্যথা রোগীর জন্য পরামর্শ
- হাঁটুর ব্যথা থাকা অবস্থায় যদ্দুর সম্ভব হাঁটুকে বিশ্রাম দিন।
- ঝুঁকে বা উপুড় হয়ে কোনো কাজ করবেন না। একই স্থানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
- ভারী কোনো জিনিস যেমন-এক বালতি পানি, বেশি ওজনের বাজারের থলে ইত্যাদি বহন করবেন না।
- সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন। পিঁড়িতে বসে কোনো কাজ করবেন না।
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করবেন না, জরুরি হলে মেরুদন্ড সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ না করে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
- বাথরুমে কমোড ব্যবহার করুন। গ্রামের বাড়িতে একখানা চেয়ারের মাঝখানে ছিদ্র করে বসে বসে পায়খানা প্রস্রাব করবেন।
- চলাফেরার সময় হাঁটুতে ইলাস্টিক ক্যাপ এবং হাতে লাঠি ব্যবহার করুন।
শেষ কথাঃ
সুস্থ ভাই-বোনদের ও বলছি, এই পরামর্শগুলো আপনিও সঠিকভাবে মেনে চলুন এবং হাঁটুর বাতব্যথা থেকে বেঁচে থাকুন। যদি এর পরও আপনার হাঁটুতে ব্যথা হয়ে থাকে, তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ক্রেডিটঃ ডা. এম এ শাকুর
সাবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।