সুদের নিন্দা – ‘রিবা’ সুদের ব্যাপারে হাদীস

মারাত্মক খারাপ কার্যগুলোর মধ্যে সুদের লেনদেনও অন্তর্ভুক্ত। এই খারাপ কার্যটি বর্তমানে এমনভাবে ব্যাপকতা লাভ করিয়াছে যে, মানুষের অন্তর থেকে সুদ খারাপ হওয়ার অনুভূতি পর্যন্ত মিটিয়া গিয়াছে। দুনিয়া এবং আখেরাতে সুদের শাস্তি বড়ই মর্মন্তুদ।

যেন দংশন না করে

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ আমি মেরাযের রাত্রে সপ্তম আকাশের উপর বজ্রের আওয়াজ ও গর্জন শ্রবণ করি এবং বিজলীর চমক দেখিতে পাই। আর দেখিতে পাই যে- কতগুলি লোকের পেট ঘরের ন্যায় বড় বড়। এইগুলি সাপ বিচ্ছু দ্বারা পিরপূর্ণ। বাহির থেকে পেটের ভিতরে সবকিছু দেখা যাইতেছিল। আমি জিবরাইল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, তাহারা কেমন লোক? তিনি বলিলেন- তাহারা হইতেছে সুদখোর।

সুদ ‘রিবা’ এবং ধ্বংস

কেহ বলিয়াছেন- যে শহরে যিনা হইতে থাকে আর সুদের প্রচলন হয়, সে শহর ধ্বংস হইয়া যায়। হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- যে ব্যক্তি (ব্যবসা সংক্রান্ত)  শরয়ী মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা করা ব্যতীত ব্যবসা করে, সে সুদে লিপ্ত হইয়া পড়ে। এই জন্যই হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলিতেন- যে ব্যক্তি, মাসআলা মাসায়েল অবগত নয়, সে যেন আমাদের বাজারে বেচাকেনা না করে।

চারটি ধ্বংসাত্বক কার্য

হযরত  আব্দুর রহমান বিন সাবেত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- যে সকল জনপদে চারটি বিষয় ব্যাপক প্রসার লাভ করে, সে সকল জনপদ ধ্বংস করিয়া দেওয়া হয়।

১। মাপে কম দেওয়া।
২। ওজনে কম দেওয়া।
৩। যিনা করা।
৪। সুদ খাওয়া ।

যিনা ব্যাপক হওয়ার দ্বারা মহামারী প্রসার লাভ করে। মাপে ও ওজনে কম দেওয়ার ফলে বৃষ্টি বন্ধ হইয়া যায়। সুদের প্রচলনের ফলে হত্যা ও খুনাখুনীর বাজার গরম হইয়া যায়।

ব্যাখ্যাঃ উল্লিখিত কার্যগুলোর মধ্যে কোনটি এমন আছে, যাহা আজ আমাদের সমাজে পাওয়া যায় না? উপরোল্লেখিত হাদীছ ও উক্তি থেকে খুব ভাল ভাবে বুঝা যায় যে, ব্যবসা সংক্রান্ত মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা করা ব্যবসায়ীদের জন্য কত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ? কিন্তু আজ শতকরা নিরানব্বই জন এমনকি তদপেক্ষাও অধিক ব্যবসায়ী এমন রহিয়াছে, যাহারা মাসআলা মাসায়েলও শিক্ষা করেনা, আবার শিক্ষা করার গুরুত্বের অনুভূতিও তাদের নাই। আফসোস! শত আফসোস! কেহ কেহ তো শরয়ী আহকাম শিক্ষা করা হইতে দূরে থাকিতে চায়। আর বলে যে, আহকাম শিক্ষা করিবার পর হালাল হারামের প্যাঁচে পড়িয়া সম্পাদ উপার্জন করা দূস্কর হইয়া পড়িবে। কোন কোন জালেম তো মুখে এতটুকু পর্যন্ত উচ্চারণ করিতে দ্বিধাবোধ করে না যে – মওলবীগণ হালাল হারামের প্যাঁচ করিয়া আমাদিগকে উপার্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখিতে চায়। দুনিয়া আজ কোথায় থেকে কোথায় পৌঁছিয়া গিয়াছে? যাহারা এই ধরনের ধারণা রাখে বা এই ধরনের কথা বলে তাহাদের জন্য বড়ই আফসোস! তাহাদের এতটুকুও খবর নাই যে, তাহাদিগকে কাল কেয়ামতের দিনে বিশ্ব প্রতিপালকের আদালতে দন্ডায়মান হইতে হইবে। যেখানে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের নিক্তি কায়েম করা হইবে। কুরআন পাকে তাহাদের সম্পর্কে বলা হইয়াছে –

এমন সকল ওজনকারীদের জন্য ধ্বংস যাহারা মাপিয়া লওয়ার সময় পরিপূর্ণভাবে মাপিয়া লয়, আর যখন অন্যকে মাপিয়া বা ওজন করিয়া দেয় তখন কম দেয়। তবে কি তাহারা জানেনা যে, তাহাদিগকে এমন এক বিচারের দিনে উত্থিত করা হইবে, যেদিন সমস্ত লোক বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হইবে।

কয়েকটি হাদীসঃ

১। সুদ বা রিবা গ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের চুক্তি লিখক এবং সুদের ব্যাপারে সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি আল্লাহ পাক অভিশাপ বর্ষণ করেন, আর বলেন-গোনাহের ক্ষেত্রে তাহারা সকলে সমান। (মুসলিম শরীফ)

২। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, জানিয়া বুঝিয়া এক দেরহাম পরিমাণ সুদ বা রিবা খাওয়া ছত্রিশ বার যিনা অপেক্ষা খারাপ। (আহমদ)

৩। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলিয়াছেন- যাহার শরীর হারাম মাল দ্বারা প্রতিপালিত হয়, তাহার জন্য অগ্নিই উপযুক্ত।

৪। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন- যখন কোন ব্যক্তি অপরকে করয দেয়, তখন সে তাহার হাদিয়া কবুল করিবেন। (বুখারী)

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *