সহীহ হাদীছ দ্বারা তারাবীর নামায বিশ রাক’আতের প্রমাণ!! 20 rakat taraweeh hadith.

১. বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ২৬৯ নং পৃষ্ঠাতে আছে, রমযান শরাফের কোন এক রাতে উমর রা. মসজিদে নববীতে তাশরীফ নিয়ে যান। অতঃপর দেখেন মসজিদে কোন কোন মানুষ একা একা তারাবীর নামায আদায় করছেন। আবার বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট জামাত হচ্ছে। তিনি চিন্তা করলেন, সকল নামাযীকে এক ইমামের পিছনে একত্র করে দেয়া উচিত। তখন তিনি সকল মুসল্লিকে উবাই ইবনে কা’ব রা, এর পিছনে নামায পড়তে হুকুম দেন। হাদীছের রাবী (বর্ণনাকারী) আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল বারী রহ. বলেন, আমি উমর রা. এর সাথে অন্য একরাতে মসজিদে গিয়ে দেখলাম সমস্ত মুছল্লি উল্লেখিত ইমামের পিছনে (জামা’আতের সাথে তারাবীর) নামায পড়ছেন।
তারাবির_নামায
২. আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী ২য় খণ্ড ৪৯৬ নং পৃষ্ঠাতে আছে, সাহাবী হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. বলেছেন, তারা (সাহাবা ও তাবেঈগণ) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে (তারাবীর নামায) বিশ রাক’আত জামা’আতের সাথে পড়তেন। তিনি আরো বলেছেন, তাঁরা শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরসমূহ পড়তেন এবং উছমান ইবনে আফফান রা, এর যুগে দীর্ঘ নামাযের কারণে তাঁদের কেউ কেউ লাঠির উপর ভর দিয়ে দাড়াতেন।
৩. আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী ১/২৬৭-২৬৮, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাকী ২/৩০৫ তে সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে এরূপ আরেকটি বর্ণনা নকল করা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে (তারাবীর নামায়) বিশ রাক’আত পড়তাম। অতঃপর বিতির পড়তাম। উক্ত রেওয়ায়তের সনদ সহীহ্। হাদীছ ও ফিকহের অনেক ইমাম এ রেওয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেছেন। এবং একাধিক হাফেযে হাদীছ সুস্পষ্টভাবে তা সহীহ বলেছেন। যেমন ইমাম নববী, আল্লামা তকী উদ্দীন সুবকী, ইমাম ওলি উদ্দীন ইরাকী, বদরুদ্দীন আইনী, জালাল উদ্দীন সুয়ূতী প্রমুখ। দেখুন আল মাজমূ’উ শারহুল মুহাযযাব ৩/৫২৭, নছবুর রায়াহ ২/১৪৫, উমদাতুল কারী শারহু সহীহিল বুখারী ৭/১৭৮, ইরশাদুস সারি শারহু সহীহিল বুখারী ৪/৫৭৮, আল মাসাবীহ ফী ছালাতিত তারাবীহ, আলহাভী ইত্যাদি। যেহেতু হাদীছ ও ফিকহের ইমামগণ ও হাফেযে হাদীসগণ উক্ত রেওয়ায়তকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে তা সহীহ বলেছেন। সুতরাং ১৩ শত হিজরীর পর কোন গাইরে মুকাল্লিদ মেজাজের মুহাদ্দিছ বা আলেম উক্ত রেওয়ায়তকে যদি যয়ীফ বলে থাকেন, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তার বিস্তারিত আলোচনা গাইরে মুকাল্লিদদের ৪র্থ দলীলের উত্তরের অধ্যায়ে আসবে।
৪. তাবেয়ী ইয়াযিদ ইবনে রুমান রহ. থেকে মুয়াত্তা মালেক ৪০নং পৃষ্ঠাতে, আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী ১ম খণ্ড ৪৯৬ নং পৃষ্ঠাতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উমর রা. এর যুগে মানুষ (সাহাবা ও তাবেঈগণ) রমযান মাসে (তারাবীহ ও বিতির) ২৩ রাকআত পড়তেন।
৫. ইমাম বুখারী রহ. এর প্রিয় উস্তাদ আবু বকর ইবনে আবী শায়বা তাঁর লিখিত মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা নামক হাদীছের কিতাব ৫ম খণ্ড
২২৪ নং পৃষ্ঠাতে তাবেঈ আব্দুল আযীয ইবনে রুফাই রহ. থেকে তাঁর বর্ণনা নকল করেছেন। তিনি বলেন, উবাই ইবনে কা’ব রা, রমযান মাসে
মদীনায় (মসজিদে নববীতে) সালকে নিয়ে বিশ রাক’ আত (তারাবীহ) এবং তিন রাকআত বিতির পড়তেন।
৬. উক্ত মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা কিতাবের ৫ম খণ্ড ২২৩ নং পৃষ্ঠাতে তাবেয়ী ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারী রহ, এর বর্ণনা নকল করেন। তিনি বলেন, উমর রা. এক ব্যক্তিকে আদেশ দিয়েছেন তিনি যেন লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাক’আত (তারাবীহ) পড়েন। উপরে উল্লেখিত হাদীছসমূয় থেকে প্রথমটি সহীহ বুখারী শরীফের হাদীছ। উক্ত হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, হযরত উমর রা. উবাই ইবনে কাব রা. কে  রমযান মাসে তারাবীর নামায জামা’আতের সাথে পড়ার হুকুম দিয়েছেন। তিনি উক্ত হুকুম অনুযায়ী তারাবীর নামায জামা’আতের সাথে পড়াতেন। তবে বুখারী শরীফে কত রাক’আত পড়াতেন তা উল্লেখ করা হয়নি। হ্যাঁ বাইহাকী শরীফ থেকে সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রহ. কর্তৃক বর্ণিত সহীহ্ হাদীছে বিশ রাক’আত তারাবীর নামায পাড়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত দুই সহীহ্ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, উমর রা. এর হুমে উবাই ইবনে কা’ব রা. তারাবীর নামায জামা’আতের সাথে পড়ানো আরম্ভ করেন। তদুপরি দ্বিতীয় সহীহ্ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, উমর রা. এর হুকুমে উবাই ইবনে কা’ব রা. বিশ রাক’আত তারাবীর নামায জামা’আতের সাথে পড়ানো আরম্ভ করেন।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *