সফরে কসর করা আবশ্যক – কসরের জন্য সফরের দূরত্ব।
![]() |
Image Credits: Pexels |
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন: আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর যবানে ফরয করেছেন নিজ অঞ্চলে চার রাকাত, সফরে দুই রাকাত এবং ভীতিকর অবস্থায় এক রাকাত। (মুসলিম: ১৪৪৮)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাযাহ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩২৩৮)
সারসংক্ষেপ : উপরোক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সফরে দুই রাকাতই মোট নামায। সুতরাং সেখানে বৃদ্ধির সুযোগ নেই।
কোন কোন ইমাম এটাকে ‘ছাড়’ বলে মন্তব্য করতঃ পূর্ণ চার রাকাত পড়া উত্তম বলেছেন। দলীল হিসেবে ঐ সকল হাদীস পেশ করেছেন যাতে কছর নামাযকে ছদকা বা ছাড় হিসেবে বর্ণন করা হয়েছে। এসব হাদীসের জবাবে আমরা বলি যে, আল্লাহ তাআলার ‘ছদকা’ বা ‘ছাড়’ বান্দার জন্য বড় ধরণের নিআমত যা প্রত্যাখান করা আল্লাহ তাআলার নিআমতের না শুকরী করার নামান্তর। রসূলুল্লাহ স. নিজে কখনও সফরে কসর না করার আমল করেছেন বলে আমার জানা
নেই। বরং সফরের সকল বর্ণনাতেই তাঁর কসরের কথা বর্ণিত হয়েছে। উপরন্ত রসূলুল্লাহ স.কে ধর্মীয় কোন ব্যাপারে সুযোগ দেয়া হলে তিনি সর্বদা সহজটাই গ্রহণ করতেন। (বুখারী-৩৩০৮) সুতরাং আল্লাহ তাআলার দেয়া ছাড় প্রত্যাখান করার কোন সুযোগ নেই।
হযরত আয়েশা রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, সর্বপ্রথম নামায দুই দুই রাকাত করে ফরয হয়। পরবর্তীতে সফরে নামায সেভাবেই বহাল রয়েছে। (বুখারী: ১০২৯, মুসলিম-১৪৪৩-১৪৪৪)
হযরত উমার রা. থেকে সহীহ সনদে বার্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ স.-এর যবানে ঈদুল আযহা দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর দুই রাকাত, মুসাফিরের নামায দুই রাকাত এবং জুমআর নামায দুই রাকাত। কছর নয়; বরং এটাই পূর্ণ। (নাসাঈ ১৫৬৯)
সারসংক্ষেপ : উপরোক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসাফিরের পরিপূর্ণ নামাযই দু’রাকাত এবং এটা রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক স্থিরকৃত সিদ্ধান্ত, যাতে নিজ ইচ্ছায় বৃদ্ধি করা বৈধ নয়।
কসরের জন্য সফরের দূরত্ব
হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা.যাতুন নুসুব নামক স্থানের দিকে গেলেন। তিনি তাঁর এ পরিমাণ সফরে কসর করলেন। হযরত মালেক রহ. বলেন: মদীনা ও যাতুন নুসুব নামক স্থানের মাঝে দুরত্ব হলো চার বুরুদ অর্থাৎ ৪৮ মাইল। (মুআত্তা মালেক: ৩৪১, ইবনে আবী শাইবা: ৮২২০)
হাদীসের স্তর : সহীহ, মাউকূফ। এ সনদটি মুহাদ্দিসগণের নিকটে হাদীস বর্ণনার সোনালী ধারা হিসেবে খ্যাত। সুতরাং হাদীসটি উঁচু মানের সহীহ।
হযরত আতা বিন আবি রবাহ রহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. চার বুরুদ বা তার চেয়ে বেশী দুরত্বে দুই দুই রাকাত নামায পড়তেন এবং রোজা ছাড়তেন। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-৫৩৯৭)
সারসংক্ষেপ : এক বুরুদের পরিমাণ ১২ মাইল। (মিসবাহুল লুগাত) সুতরাং চার বুরুদে ৪৮ মাইল হয়। কিলোমিটারের হিসেবে ৭৭ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এ পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রমের নিয়াতে কেউ নিজ এলাকা পরিত্যাগ করলে সে কসর করা শুরু করবে।
এক স্থানে পনের দিনের কম থাকার নিয়ত করলে সে মুসাফির থাকবে
হযরত মুজাহিদ বলেন, হযরত ইবনে উমার রা. পনের দিন ইকামাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে নিজের পিঠকে সফরের বোঝা থেকে মুক্ত করতেন এবং নামায পুরা করতেন। (ইবনে আবি শাইবা-৮৩০১)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকূফ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারীর রাবী।
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, কোন ব্যক্তি পনের দিন ইকামাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সে নামায পুরা করবে। (ইবনে আবি শাইবা-৮২৯৬)
হযরত সাঈদ বিন যুবায়ে রহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, কেউ পনের দিনের বেশি আবস্থান করলে নামায পূর্ণ করবে। (ইবনে আবি শাইবা-৮৩০২)
সারসংক্ষেপ : উপরোক্ত হাদীস ও ফতোয়া থেকে প্রমাণিত হয় যে, ১৫ দিন পর্যন্ত কোন স্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে সে ব্যক্তি মুকিম হয়ে যাবে এবং পূর্ণ নামায পড়বে। আর অবস্থানকাল যদি এর চেয়ে কম হয় তাহলে সে মুসাফির থাকবে। আরও প্রমাণিত হয় যে, মুসাফির ব্যক্তি যনি না জানে যে, সেখান থেকে সে কবে ফিরে আসবে তাহলে দুই রাকাত করে কসর নামায পড়বে। যদিও সে এ অবস্থায় এক বছর থাকে। হযরত সফিয়ান সাওরী রহ.-এর মতামতও এটাই। (ইবনে আবি শাইবা-৮৩০৫) হযরত ইবনে আবি নাযীহ রহ. থেকেও হাসন সনদে অনুরূপ মতামত বর্ণিত হয়েছে (ত্বহাবী-২৪২৬)
ফায়দা : এ ব্যাপারে রসূল স. থেকে কোন স্থির সিদ্ধান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। যে কারণে সাহাবা এবং তাবিঈদের ব্যাপক মতামতের ভিত্তিতে আমরা এ আমল গ্রহণ করেছি যে, কোন ব্যক্তি পনের দিন কোন এক এলকায় থাকার সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করলে তার সফর বাতিল হয়ে যাবে এবং সে মুকিম হিসেবে নামায পূর্ণ পড়বে। আর যদি পনের দিনের কম থাকার সিদ্ধান্ত করে অথবা কোন সিন্ধান্ত স্থির না করে তাহলে নামায কসর করতে থাকবে, তার অবস্থান যতই দীর্ঘ হোক না কেন।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং ShamimBlog এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।