মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি উদাত্ত আহ্বান

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন! মুহাজির এবং আনসারগণের মধ্যে যারা প্রবিণ ও অগ্রগন্য আর যারা যথাযোগ্যভাবে তাঁদের অনুসরণ করেছে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা সফলতা। (ছুরা তাওবা: ১০০)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মতের সফলতা সাহাবায়ে কিরামের অনুকরণের মধ্যে রয়েছে। পরকালীন সফলতার জন্য আমাদের উচিত হবে সর্বক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের পদাঙ্ক অনুসরণ করা।
কুরআন-হাদীসের মাসআলা বুঝার ক্ষেত্রে যেভাবে বর্তমান সময়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় এভাবে মুজতাহিদ ইমামগণ, তাবিঈ, তাবে তাবিঈ এমনকি সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। উদাহরণ হিসেবে আগত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন: হযরত রসূলুল্লাহ স. খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বললেন, সকলেই আসর পড়বে বনী কুরায়যায় গিয়ে। পথিমধ্যে আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেলো। কেউ কেউ বললেন, আমরা বনী কুরায়যায় না গিয়ে নামায পড়বো না। আবার অন্যরা বললেন, আমরা বরং নামায পড়ে নিবো। কারণ রসূলুল্লাহ স.- কর্তৃক বনী কুরায়যায় গিয়ে নামায পড়ার নির্দেশ পথে সময় হয়ে গেলেও নামায ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্য নয়। (উভয় দল আপন সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমল করলেন)। অতঃপর এ ঘটনা নবী কারীম স.-এর নিকট বলা হলে তিনি তাদের কাউকে তিরস্কার করলেন না। (বুখারী-৮৯৯)।

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ বুঝার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও মতবিরোধ সৃষ্টি হতো; যার বহু উদাহবগ রয়েছে। নমুনা হিসেবে একটি মাত্র উদাহরণ পেশ করা হলো। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো: মাসআলা বা আমলগত মতবিরোধ তাঁদের পারস্পারিক সৌহার্দপূর্ণ সুসম্পর্কে কোন ফাটল সৃষ্টি করত না। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: তাঁরা কাফেরদের ব্যাপারে ছিলেন বজ্রকঠিন; তবে নিজেদের ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত দয়াপরবশ”।(সুরা ফাতাহ: ২৯) সাহাবায়ে কিরামের সে সোনালী যুগের তুলনায় আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্যের কারণে মনের দুরত্ব, সামাজিক দুরত্ব এমনকি মুসলিম ভাতৃত্ব বন্ধনেও দূরত্ব এবং বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এহেন পরিস্থিতিতে ছুন্নাতের উপর ঐক্যবদ্ধ সমাজকে সহীহ হাদীসের দিকে আহবানের নাম ব্যবহার করে নতুন করে দ্বিধাবিভক্ত করা হচ্ছে। তাকলীদের কুৎসা রটিয়ে প্রত্যেকের হাতে কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যার গুরুদায়িত্ব তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা ইসলাম ও মুসলিম আম্মাকে অগণিত দলে বিভক্তের চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া নয় কি? সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত উম্মতের কোন অংশ নিশ্চিত বিদআতের ফাদে আটকে না পড়ছে ততক্ষর পর্যন্ত তাদের আমলী ঐক্য নষ্ট করার যে কোন আহবান থেকে বিরত থাকার বিনীত অনুরোধ করছি।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *