বেহেশত এবং বেহেশতবাসী

বেহেশত,বেহেশতবাসী

বেহেশতের হাকীকত

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করিলামঃ বেহেশত কিসের তৈয়ারী? হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, পানির তৈয়ারী। আমরা বলিলাম, আমাদের উদ্দেশ্য বেহেশতের অট্টালিকা নিমার্ণ সম্পর্কে অবগত হওয়া। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ বেহেশতের একটি ইট স্বর্ণের অপরটি রূপার আর প্রলেপ হইল মেশকের, ইহার মাটি জাফরানের আর কংকর মুক্তা এবং ইয়াকুতের। যে ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করিবে সে কোন প্রকার নেয়ামত হইতে বঞ্চিত ও নিরাশ থাকিবে না। সে ব্যক্তি অনন্তকাল তথায় বসবাস করিবে। কখনো তাহার মৃত্যু হইবেনা। তাহার পরিধেয় ভূষণ কখনো পুরাতন হইবে না। যৌবনও অটল থাকিবে।

অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরাইয়া দেওয়া হয় না।

(১) আদেল ইমাম অর্থাৎ ন্যায়পরায়ন বাদশা ও বিচারক।
(২) রোযাদারের দোয়া ইফতারের সময়।
(৩) অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া, তাহার প্রার্থনা মেঘের উপরে উঠাইয়া নেওয়া হয়। আল্লাহ পাক বলেন, কিছু বিলম্ব হইলেও আমি অবশ্যই তোমার সাহায্য করিবো।

বেহেশতের বৃক্ষ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ বেহেশতে একটি বৃক্ষ আছে। যাহার ছায়ায় বেহেশতবাসীগণ শত বৎসর চলার পরেও উহার ছায়া অতিক্রম করিতে পারিবেনা, অধিকন্তু তাহারা এইরূপ নেয়ামত সমূহ পাইবে, যাহা কোন চক্ষু কখনও অবলোকন করে নাই, কোন কর্ণ উহার বর্ণনা কখনও শ্ৰবণ করে নাই এবং কোন অন্তর উহার কল্পনাও করে নাই। কুরআন মজিদে বর্ণিত হইয়াছে- কেহই জানেনা যে, সেখানে চক্ষুর প্রশান্তি প্রদানকারী কি লুকাইয়া রাখা হইয়াছে।

বেহেশতের একটা সামান্য বিন্দু পরিমাণ স্থানও দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যাহা কিছু আছে তাহা হইতে উত্তম।

বেহেশতের হুর ‘লায়বা’

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ বেহেশতে লায়বা নাম্নী এক হুর রহিয়াছে। চার বস্তুর সমন্বয়ে তাহাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে যথা-

(১) মেশক। (২) আম্বর (এক প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য)।
(৩) কর্পূর (ইহাও এক প্রকার সুগন্ধি বিশেষ)।
(৪) জাফরান। প্রভৃতি উপাদান দ্বারা তাহার শরীর গঠন করা হইয়াছে। বেহেশতের সমস্ত হুর তাহার প্রতি আসক্ত। যদি সে সাগরে থুথু ফেলে, তাহা হইলে সাগরের পানি মিঠা হইয়া যাইবে। তাহার ললাটে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে যে আমাকে পাইতে চায় সে যেন আল্লাহর অনুগত হয়।’ হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বেহেশতের ভূমি রূপার এবং মাটি মেশকের হইবে। আর বৃক্ষ মূল রূপার হইবে। ইহার শাখা প্রশাখা সমূহ মুক্তা এবং জবরজদ পাথরের নির্মিত হইবে। পাতা এবং ফল হইবে নিম্নমুখী মূল হইবে উর্ধ্ব মুখী। দাঁড়াইয়া, বসিয়া, শুইয়া অর্থাৎ যে ভাবে ইচ্ছা উহার ফল পাড়িতে পারিবে।

বেহেশতী ব্যক্তির সৌন্দর্য ও মাধুর্য

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- বেহেশতী ব্যক্তির সৌন্দর্য ও মাধুর্য ক্রমশঃ বাড়িতে থাকিবে। পার্থিব জগতে তো ধীরে ধীরে বার্ধক্য নামিয়া আসে। সেখানে রূপ যৌবনের মাধুর্যের ক্রমোন্নতি হইতে থাকিবে।

বেহেশতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত

হযরত সুহায়র রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ যখন বেহেশতীরা বেহেশতে এবং দোযখীরা দোযখে চলিয়া যাইবে, তখন এক ঘোষক ঘোষণা করিবে, হে বেহেশত বাসীগণ! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি এক অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। আল্লাহ পাক উহা পূরণ করিতে চান। তখন বেহেশতীরা বলিবে- সে অঙ্গীকার কি? আল্লাহ পাক কি আমাদের নেকির পাল্লা ভারী এবং মুখমণ্ডল আলোকিত করেন নাই? তিনি কি আমাদেরকে বেহেশতে প্রবিষ্ট করান নাই? তিনি কি আমাদেরকে দোযখ হইতে মুক্তি দেন নাই?

হুযুর সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষৎ বাণী মোতাবেক পর্দা উঠাইয়া দেওয়া হইবে। বেহেশতবাসীরা আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হইবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ আল্লাহর শপথ করিয়া বলিতেছি, বেহেশতীদের ইহা অপেক্ষা অধিক প্রিয় এবং উত্তম অন্য কোন নিয়ামত হইবেনা। হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে এই নেয়ামত দান করুন।

সু-সংবাদ প্রদানের এক অদ্ভুত অবস্থায় জিবরাইল (আঃ)-এর আগমন

হযরত আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনা একবার জিবরাইল (আঃ) একটি সাদা আয়নাসহ নবী করীম সাল্লাথাই আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করেন। উহাতে একটি কাল দাগ ছিল। রাসূলে মাকবুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেনঃ হে জিবরাইল! ইহা কিসের আয়না?

জিবরাইল (আঃ) উত্তর দিলেন- ইহা জুমার দিন সাদৃশ্য। আর কাল দাগটি প্রতি শুক্রবার দোয়া কবুল হওয়ার সময়। আপনাকে এবং আপনার উম্মতকে ইহার দ্বারা (অর্থাৎ জুমার দিন দ্বারা) অন্যান্য উম্মতের উপর প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। এই দিনে এমন একটি সময় রহিয়াছে যখন প্রতিটি দোয়া কবুল হয়। কিন্তু আমাদের কাছে ইহা একটি অতিরিক্ত দিন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম জিজ্ঞাসা করিলেনঃ অতিরিক্ত দিনের কি অর্থ জিবরাইল (আঃ) উত্তর দিলেন আল্লাহ পাক বেহেশতে একটি ময়দান নির্ধারিত করিয়া রাখিয়াছেন যে, সেখানে মেশকের একটি টিলা (উচ্চস্থান) রহিয়াছে প্রতি জুমার দিনে সেখানে নূরের মিম্বার বিছাইয়া দেওয়া হয়। উহার উপর আম্বিয়ায়ে কেরায় (আঃ) সমাসীন হন। অপর কতগুলি ইয়াকুত ও যবরজদ পাথর খচিত স্বর্ণের মিম্বারে সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও নেককারগণ উপবিষ্ট হন। মেশকের সে টিলায় আহলে গারফ বসেন (অর্থাৎ সাধারণ জান্নাতীগণ)। অতঃপর সকলে একত্রে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেন। আল্লাহ পাক ঘোষণা করিবেনঃ তোমাদের চাওয়ার আছে চাও! তখন সকলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করিবেন। আল্লাহ পাক বলিলেনঃ আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট আছি। আমি তোমাদেরকে আমার স্থানে বসবাস করার সুযোগ দিয়াছি এবং স্বীয় পক্ষ থেকে সম্মান করিয়াছি। অতঃপর আল্লাহ তায়ালার জ্যোতি (তাজাল্লী) প্রকাশ পায়। আর তাহারা আল্লাহ পাকের জ্যোতি দেখিতে পায়। সুতরাং এইদিনে তাহাদের সম্মান বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তাহাদের কাছে জুমার দিন অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোন দিন নাই।

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছেঃ আল্লাহ পাক ফিরিশতাদিগকে বলিবেনঃ আমার বন্ধুগণকে আহার করাও। অতঃপর ফিরিশতাগণ বিভিন্ন রকম খাদ্য দ্রব্য উপস্থিত করিবেন। আর তাহারা উহার প্রতি লোকমাতে নিত্য নতুন স্বাদ উপভোগ করিবে। পুনরায় আল্লাহর আদেশে পানীয় দ্রব্যাদি উপস্থিত করা হইবে এবং প্রতি ঢোকে নতুন নতুন স্বাদ অনুভব করিবে। তাহাদের পানাহারান্তে আল্লাহ পাক বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভু! আমি তোমাদের কাছে যে অঙ্গীকার করিয়াছিলাম উহা তো পুরো করিয়াছি। এখন আর যাহা কিছু চাহিবে উহাই দেওয়া হইবে। আল্লাহর বান্দাগণ বার বার আবেদন করিবে যে, আমরা আপনার সন্তুষ্টি চাই। “আল্লাহ পাক উত্তর দিবেন, আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট আছি” এবং আমার কাছে আরও কিছু রহিয়াছে। আজ তোমাদেরকে এমন এক নিয়ামত দান করিব যাহা ঐ সমস্ত নিয়ামতের উর্ধ্বে। অতঃপর পর্দা উঠাইয়া দেওয়া হইবে এবং সকলেই আল্লাহর নুর (তাজাল্লী) দেখিতে পাইবে আর তৎক্ষণাৎ সিজদায়া পড়িয়া যাইবে। আল্লাহ তায়ালার পূনঃনির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত সিজদার অবস্থায় থাকিবে। তারপর আল্লাহ পাক বলিবেনঃ মাথা উঠাও! ইহা ইবাদত করার স্থান নহে। বেহেশতবাসীরা আল্লাহর দিদার লাভে সকল নিয়মিত ভুলিয়া যাইবে। তারপর আরশের নিম্নদেশ থেকে সুশীতল সমীরণ প্রবাহিত হইতে থাকিবে। মেশকের শুভ্র টিলা হইতে মেশক উঠিয়া জান্নাতিদের মাথা এবং তাহাদের অশ্বসমূহের ললাটে পতিত হইবে। যখন তাহারা (নিজ নিজ বাসভবনে) ফিরিয়া যাইবে। তখন তাহাদের সহধর্মিনীরা বলিবে-“আপনারা তো আরও অধিক সুন্দর ও সুশ্রী হইয়া ফিরিয়াছেন।

হযরত ইকরামা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-বেহেশতে নারী পুরুষ উভয়েই তেত্রিশ বৎসর বয়স্ক এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী হইবে। প্রত্যেকের পরিধানে সত্তরটি পোষাক শোভা পাইবে। প্রত্যেক স্বামী স্বীয় সহধর্মিনীর মুখমন্ডল, বক্ষ দেশ ও পাদদেশে স্বীয় দেহাবয়ব দেখিতে পাইবে। অনুরূপভাবে স্ত্রীও স্বামীর মুখমন্ডল ইত্যাদিতে স্বীয় অবয়ব দেখিতে পাইবে। তথায় মুখ ও নাসিকা হইতে দুর্গন্ধ যুক্ত কোন কিছু নির্গত হওয়ার কল্পনাও করা যায় না। এক হাদীছে আছেঃ যদি কোন জান্নাতী হুর আকাশ থেকে তাহার হাতের তালু পৃথিবীর দিকে খুলিয়া ধরে তাহা হইলে সমগ্র বিশ্ব আলোকিত হইয়া যাইবে।

বেহেশতে পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না

যায়েদ বিন আরকাম রাদিআল্লাহু আনহু বলেন যে, কোন এক আহলে কিতাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সামনে উপস্থিত হইয়া বলিতে লাগিল আপনার মতে বেহেশতে খানাপিনার ব্যবস্থা থাকিবে কি? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন-হ্যাঁ। বেহেশতের মধ্যে তো এক ব্যক্তিকে খানাপিনা ও স্ত্রী সহবাসে শত ব্যক্তির সমপরিমাণ শক্তি দেওয়া হইবে। সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, খানাপিনার পর তো অবশ্যই পেশাব পায়খানা হইয়া থাকে, বেহেশত হইল পবিত্র স্থান। উহাতে এইসব অপবিত্র জিনিস কিভাবে থাকিতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ বেহেশতে পেশাব পায়খানা করার প্রয়োজন হবে না। বরং মেশকের সুগন্ধিযুক্ত ঘর্ম নির্গত হইবে শুধু, আর ইহাতেই খাদ্যদ্রব্য হজম হইয়া যাইবে।

বেহেশতে ‘তোবা’ বৃক্ষ

বেহেশতে ‘তোবা’ বৃক্ষ নামক একটি বৃক্ষ থাকিবে। প্রত্যেক জান্নতির ঘরে ইহার একটি করিয়া শাখা থাকিবে। আর প্রত্যেক শাখায় বিভিন্ন ধরনের ফল থাকিবে। উটের ন্যায় পক্ষী সমূহ উহার উপরে আসিয়া বসিবে। যদি কোন জান্নাতী কোন পক্ষী আহার করার ইচ্ছা করে তখন সাথে সাথে উহা দস্তর খানার উপর আসিয়া যাইবে। ঐ ব্যক্তি একই পক্ষীর এক পার্শ্ব হইতে শুকনা গোশত আর অপর পার্শ্ব হইতে ভুনা গোশত আহার করিবে। অতঃপর পক্ষীটি উড়িয়া চলিয়া যাইবে।

বেহেশতবাসীর আকৃতি

ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু এবং আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ আমার উম্মতের সর্ব প্রথম বেহেশতে প্রবেশকারীর মুখশ্রী পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় আলোকিত হইবে। তাহার পর প্রবেশকারীর মুখশ্রী উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় হইবে। অতঃপর একের পর এক বিভিন্ন আকৃতি লাভ করিবে। বেহেশতে পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হইবে না এবং নাকে মুখে দুর্গন্ধময় কোন কিছু সৃষ্টি হইবে না।
সেখানকার চিরুনী স্বর্ণের তৈরী হইবে আর সুর্গন্ধ যুক্ত কাঠের তৈয়ারী হইবে। শরীরের ঘর্ম মেশকের ন্যায় সুগন্ধযুক্ত হইবে। সকলের দেহাকৃতি এক ধরনের হইবে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর ন্যায় তেত্রিশ বৎসরের যুবক এবং হযরত আদম (আঃ)-এর ন্যায় ষাট হাত দীর্ঘ শ্মশ্রুবিহীন হইবে। ভ্র এবং পলক ব্যতীত কোথাও কোন লোম থাকিবেনা। গায়ের রং শুভ্র হইবে। পোশাক সবুজ রংয়ের হইবে। যদি কোন ব্যক্তি আহার করার ইচ্ছায় দস্তর থানা বিছায় তাহা হইলে সম্মুখ হইতে এক পক্ষী আসিয়া বলিবে, হে আল্লাহর ওলী! আমি সালসাবীল নামক প্রস্রবনের পানি পান করিয়াছি। আরশের নীচে বেহেশতের বাগানে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি এবং অমুক অমুক ফল ভক্ষন করিয়াছি। তখন সে বেহেশতী পাখীর এক পার্শ্ব হইতে রন্ধন করা অপর পার্শ্ব হইতে ভুনা গোশত খাইবে। সত্তর প্রকার পোষাক পরিহিত থাকিবে, তার প্রতিটি পোষাকের রং ভিন্ন হইবে। তাহাদের আংগুল সমূহে দশটি আংটি থাকিবে-

প্রথম আংটিতে লিখা থাকিবে-
তোমরা ইহজীবনে ধৈর্য ধারণ করিয়াছিলে তাই তোমাদের উপর শাস্তি বর্ষিত হউক।

দ্বিতীয় আংটিতে লিখা থাকিবে-
শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বেহেশতে প্রবেশ কর।

তৃতীয় আংটিতে লিখা থাকিবে-
এই জান্নাত তোমাদের কৃত আমলের বিনিময় স্বরূপ প্রদান করা হইল।

চতুর্থটিতে লিখা থাকিবে-
তোমাদের থেকে চিন্তা ভাবনা দূর করিয়া নেওয়া হইয়াছে।

পঞ্চমটিতে লিখা থাকিবে-
আমি তোমাদিগকে পোষাক ও অলংকার পরিধান করাইয়াছি।

ষষ্ঠটিতে লিখা থাকিবে –
আমি তোমাদিগকে ডাগর চোখা হুরের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করিয়াছি।

সপ্তমটিতে লিখা থাকিবে-
সেথায় তোমাদের আকাংক্ষিত সবকিছুই রহিয়াছে। অধিকন্তু রহিয়াছে তোমাদের নয়নের প্রশান্তিদায়ক বস্তু সমূহ আর সেথায় তোমরা অনন্তকাল থাকিবে।

অষ্টমটিতে লিখা থাকিবে-
তোমরা নবীগণ ও সিদ্দীকীনদের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করিয়াছিলে।

নবমটিতে লিখা থাকিবে- 
তোমরা এমন যুবকে পরিণত হইয়াছ যে তোমরা আর বৃদ্ধ হইবে না।

দশমটিতে লিখা থাকিবে- 
আজ তোমরা এমন লোকের প্রতিবেশী যাহারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না।

বেহেশতে প্রবেশের জন্য পাঁচটি শর্ত

যে ব্যক্তি উপরোল্লিখিত নিয়ামত সমূহ লাভ করিতে চায় সে ব্যক্তি যেন নিম্নে পাঁচটি বিষয়ের উপর নিয়মিত আমল রে।

(১) সকল প্রকার পাপ কার্য হইতে বিরত থাকা যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ যে ব্যক্তি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ হইতে বিরত থাকিল তাহার ঠিকানা হইবে বেহেশত।

(২) যৎসামান্য পার্থিব সম্পদের উপর সন্তুষ্ট থাকা।

(৩) নেক কাজে খুব আগ্রহী থাকা কোননা বেহেশত তো আমলের বিনিময়েই মিলবে,

(৪) আল্লাহর নেককার বান্দাদেরকে মহব্বত করা এবং তাহাদের সাথে সাক্ষাৎ করিতে থাকা। তাহাদের মজলিস সমূহে অংশগ্রহণ করিতে থাকা। কেননা কিয়ামতের দিবসে তাহাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে। হাদীছে আছে উত্তম লোকদের সহিত গভীর ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন কর কেননা কিয়ামতের দিবসে প্রত্যেকে স্বীয় ভ্রাতার জন্য সুপারিশের অধিকারী হইবে।

(৫) (আল্লাহর দরবারে) বেশী বেশী দোয়া করিতে থাকা, বিশেষ করে বেহেশত এবং উত্তম মৃত্যুর জন্য।

বেহেশতের বিনিময়

হযরত ইয়াহ্ইয়া বিন মুয়ায রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পার্থিবতা বর্জন করা তো কঠিন ব্যাপার। কিন্তু বেহেশত বর্জন ইহা অপেক্ষা আরও অধিক কঠিন। আর পার্থিবতা বর্জন করাই বেহেশতের বিনিময়।

বেহেশত এবং দোযখের সুপারিশ

হযরত আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তিনবার বেহেশত তালাশ করে তাহা হইলে বেহেশত আল্লাহর দরবারে আবেদন করে যে, হে আল্লাহ! তাহাকে বেহেশতে প্রবিষ্ট করিয়া দিন। আর যদি কোন ব্যক্তি তিন বার দোযখ হইতে রেহাই চায়, তাহা হইলে দোযখ আল্লাহর দরবারে আবেদন করে যে, হে আল্লাহ! তাহাকে দোযখ হইতে রেহাই দান করুন।

اللهم ادخلنا الحتة الله اخينا الجنة اللهم ادخل الجنة

হে আল্লাহ! আমাদিগকে বেহেশত দান করুন!!

اللهم أجرنا من النار اللهم أجرنا من النار اللهم اجرنا من النار

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদিগকে দোযখ হইতে রেহাই প্রমান করুন!!
বেহেশতে বন্ধুবান্ধবের সাক্ষাৎ কি সাধারণ অনুগ্রহ? ইহার পথে আবার রহিয়াছে অগণিত ও অফুরন্ত নিয়ামতের সমারোহ।

বেহেশতের বাজার

বলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বেহেশতে বাজার থাকবে। কিন্তু সেথায় ক্রয় বিক্রয় হইবে না। বরং বন্ধু বান্ধবগণ বৃত্তকারে উপবেশন করিবে এবং পার্থিব জগত সম্পর্কীয় আলাপ আলোচনা করিতে থাকিবে যে,
জাগতিক জীবনে কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করিয়াছিল। পার্থিব জগতে দরিদ্র এবং সম্পদশালীর অবস্থা কি ছিল। মৃত্য কিভাবে আগমন করিছিল এবং কত দুঃখ কষ্ট সহ্য করিয়া বেহেশতে পৌছিয়াছে।

বেহেশত লাভের জন্য কেউ প্রস্তুত রহিয়াছে কি?

বেহেশতের হাকিকত, উহার নিয়ামত সমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থা আপনি অধ্যয়ন করিয়াছেন, সুতরাং বেহেশতে প্রবেশ করার জন্য বোধ হয় অশ্যই আপনার মন চাহিতেছে এবং সে উদ্দেশ্যে হয়তো বা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনাও করিতেছেন।
নিঃসন্দেহে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বেহেশতের আকাংক্ষা থাকা চাই। কিন্তু ইমান এবং নেক আমল ব্যতিরেকে বেহেশত লাভের ইচ্ছা পোষণ করা এবং শুধুমাত্র দোয়া করিয়াই ক্ষান্ত থাকা নিজেকে ধোকা দেওয়ার নামান্তর। সে ব্যক্তি মুর্খ যে বেহেশতের আকাংক্ষা তো করে কিন্তু গোনাহে লিপ্ত থাকিয়া নেক আমলের পুজি সংগ্রহের ব্যাপারে গাফেল থাকে। মুয়াযযিন আল্লাহর দিকে
আহবান করার পরও সে আরামে শুইয়া থাকে। ব্যবসায় লিপ্ত থাকিয়া ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত নামায নষ্ট করিতেছে। যাকাত আদায় করার সময় হইলে মালের মহব্বতে প্রাণ বায়ু উড়িয়া যাইতে চায়। রমযান মাস উপস্থিত হইলে রোযা রাখার খবরও থাকে না। হজ্জ ফরজ হইলে সম্পদের মহব্বতে হজ্জ না করিয়াই মরিয়া যায়। ব্যবসায় হালাল হারামের প্রতি বিন্দুমাত্রও লক্ষ্য রাখেনা। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করাকে বাহাদুরি মনে করে। কুরআন হাদীস শিক্ষা করা এবং শিক্ষা প্রদানকে হীন কাজ বলিয়া মনে করে। দুর্বলদের উপর জুলুম অত্যাচার অবিচার করে, দরিদ্রকে কষ্ট দেয়, আর বলপূর্বক পারিশ্রমিক বিহীন কাজ করাইয়া নেয়। ঘুষ দেওয়া নেওয়া ভাল কাজ বলিয়া মনে করে, এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে। বিধবাদের দুর্বলতা ও অসহায় অবস্থা হইতে ফায়দা লুটে। একে অন্যের অধিকার গ্রাস কবিয়া লয়। নফল ইবাদতের ভয়ে পালাইতে থাকে। আল্লাহর জিকির হইতে দূরে থাকে। এতদ্বসত্ত্বেও শুধুমাত্র বেহেশতই নহে বরং বেহেশতের উচ্চ মর্যাদার আকাংক্ষা করা নির্বুদ্ধিতা ছারা আর কি হইতে পারে? যদি বেহেশতে যাইতে হয় তাহা হইলে পূর্ণ জীবনই আল্লাহর এবং রাসূলুল্লাহু সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নির্দেশানুযায়ী জীবন-যাপন করিতে হইবে। কুপ্রবৃত্তিকে দমন করিতে হইবে। এক কবি বলিয়াছেন-সর্বদা গাফেল থাকা তোমার বৈশিষ্ট্য নহে। মনে রাখিও বেহেশত এত সস্তা নহে। দুনিয়া তো পথিকের চলার পথ মাত্র। ইহা অবস্থানের স্থান নহে। আরাম আয়েশ আর যেমন খুশী জিন্দেগী চালাইবার স্থান নহে।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *