যোহর শীতকালে ওয়াক্তের শুরুতে আর গরমে দেরি করে পড়া উত্তম
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, গরম প্রখর হলে রসূলুল্লাহ স. গরমের উত্তাপ ঠান্ডা হওয়ার পর নামায আদায় করতেন। আর শীতকালে নামায তাড়াতাড়ি (ওয়াক্তের শুরুতে) আদায় করে নিতেন। (নাসাঈ-৫০০) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি বুখারী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩৩০৮)
হাদীসের স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারীর রাবী। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ নাসাঈ-৪৯৯)
হযরত আবু হুরায়রা ও হযরত ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: গরমের প্রচন্ডতা বৃদ্ধি পেলে তোমরা (যোহরের) নামায (সূর্যের তাপ) ঠান্ডা হওয়ার পর আদায় করবে। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (বুখারীঃ ৫০৮) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযা, মুয়াত্তা মালেক এবং তিরমিযী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল- ৩৩০৩)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, গরমের প্রচন্ডতা বেশ হলে জোহরের নামায এতটুকু দেরি করে পড়তে হয় যেন সূর্যের তাপ কিছুটা কমে আসে। আর শীতকালে ওয়াক্তের শুরুতে পড়ে নিতে হয়।
আসরের নামায সামান্য দেরি করে পড়া উত্তম
হযরত উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ স. যোহরের নামায তোমাদের চেয়ে বেশী তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। আর তোমরা রসূলুল্লাহ স.- এর চেয়ে আসরের নামায বেশী তাড়াতাড়ি আদায় কর। (তিরমিযী: ১৬১)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। ইমাম তিরমিযী রহ. উম্মে সালামা রা.-এর এ হাদীসটিকে ভিন্ন একটি সনদেও বর্ণনা করেছেন এবং সেটাকে আরও বেশী সহীহ বলেছেন।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আসরের নামায এতটুকু দেরি করে পড়া মুস্তাহাব। যদি কোন ব্যক্তি ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর দ্বিতীয় মতানুসারে কোন জিনিসের ছায়া তার মূল ছায়া ব্যতীত সমপরিমাণ হলে আসরের নামায পড়তে চায় তাহলে এ হাদীস মোতাবেক একটু দেরি করে পড়াই মুস্তাহাব হবে। তবে হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মতানুসারে কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়ার পরে আসর পড়তে চাইলে দেরি না করে বরং শুরু ওয়াক্তে পড়াই উত্তম হবে। কেননা সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে আসর পড়ার তাকীদ বহু হাদীসে এসেছে। আর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পরে আসর পড়লে সূর্যের রং কিছুটা পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়ে যায় বলেই মনে হয়; বিশেষ করে শীতের দিনে।
সূর্য ডোবার সাথে সাথেই মাগরিবের নামায পড়া উত্তম
হযরত রাফে’ বিন খদীজ রা. বলেন: আমরা রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে মাগরিবের নামায পড়ে ফিরতাম। (আর আকাশ এত আলোকিত থাকতো) যে, আমাদের কেউ তীর নিক্ষেপ করলে সে তার নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত (বুখারী: ৫৩২) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম এবং ইবনে মাযা শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩২৯৫)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাগরিবের নামায সূর্য ডোবার সাথে সাথে এত তারাতাড়ি আদায় করতে হয় যে নামাযান্তে কেউ তীর ছুঁড়লে সে তার নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পায়।
মাগরিবের আযানের পর জামাত শুরু করতে বিলম্বের পরিমাণ
হযরত আব্দুল্লাহ আল মুযানী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: মাগরিবের পূর্বে নামায পড়ো। এ কথাটি তিনবার বললেন। তৃতীয়বারে গিয়ে বললেন: ‘যে চায়’। কথাটি এ আশঙ্কায় বললেন যেন মানুষ এটাকে সুন্নাত বানিয়ে না নেয়। (বুখারী: ১১১২) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি অবু দাউদ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৪১১৪)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাগরিবের আযানের পরে জামাত শুরু করতে দুই রাকাত নফল নামায পড়ার মতো সময় পরিমাণ দেরি করা যেতে পারে। কেননা মাগরিবের জামাতের পূর্বে দুই রাকাত নফল নামায পড়ার অনুমতি এ হাদীসে বর্ণিত আছে। এ কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, আমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়ব; বরং উদ্দেশ্য হলো, এতটুকু দেরি করলে মুস্তাহাব ওয়াক্ত চলে যাবে না।
কোন কোন মসজিদে মাসআলা আলোচনার নামে আরও বেশী দেরি করা হয়ে থাকে যা ঠিক নয়। কেননা জিবরাঈল আঃ-এর ইমামতির প্রসিদ্ধ হাদীসে বর্থিত রয়েছে যে, তিনি উভয় দিন মাগরিবের নামায সূর্য ডোবার সাথে সাথে আদায় করেছেন (তিরমিযী-১৪৯)
ইশার নামায দেরি করে পড়া মুস্তাহাব
হযরত সাইয়ার বিন সালামা রহ. বলেন, আমি ও আমার পিতা একবার আবু বারযা আসিলামী রা.-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলেন: রসূলুল্লাহ স. ফরয নামায কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বললেন: রসূলুল্লাহ স. জোহরের নামায সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে গেলে আদায় করতেন। আসর এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে নিজ বাড়ীতে পৌছে যেত; আর তখনও সূর্য সতেজ থাকতো । মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছেন তা আমি ভুলে গেছি। আর ইশার নামায দেরি করে আদায় করতে পছন্দ করতেন। তিনি ইশার আগে ঘুমানো এবং ইশার পরে কথা বলা অপছন্দ করতেন। আর ফজরের নামায এমন সময় শেষ করতেন যখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এ নামাযে তিনি ষাট থেকে একশত আয়াত তিলাওয়াত করতেন। (বুখারী: ৫২০) শব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাযা এবং আবুদাউদ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩২৭৭)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূল স. ইশার নামায দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন। অতএব, এটাই মুস্তাহাব। অবশ্য মুসল্লিদের জন্য কষ্টকর হলে কিংবা মুসল্লী কম হওয়ার আশঙ্কা থাকলে শুরু ওয়াক্তে ইশার নামায পড়ায় কোন দোষ নেই। (বুখারী: ৫৩৮ ও ৫৪৩)