বয়স্ক ভাতা আবেদন | বয়স্ক ভাতা ফরম
আপনি কি বয়স্ক ভাতা আবেদন বা বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি পড়ে বযস্ক ভাতার আবেদন, বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম এবং বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন বয়স্ক ভাতা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
বয়স্ক ভাতা কি?
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে থাকে। তারা যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয় তাদের দারিদ্রতা আরো বেড়ে যায়। কারণ তারা তখন আর কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার এই দরিদ্র বৃদ্ধদের কথা বিবেচনা করে একটা ভাতা চালু করে। যা বয়স্ক ভাতা বা বৃদ্ধ ভাতা নামে পরিচিত। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে ভাতা চালু করা হয় তার নাম বয়স্ক ভাতা।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার শর্ত ও যোগ্যতা কি?
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিটি বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- বয়স্ক ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে ।
- বয়স্ক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে ।
- বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর হতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর হতে হবে।
- সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়স বিবেচনায় আনতে হবে।
- বয়স্ক ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ ১০,০০০ টাকা হতে হবে ।
- বয়স্ক ব্যক্তিটি বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
বয়স্ক ভাতা কখন থেকে চালু করা হয়?
বয়স্ক ভাতা সর্বপ্রথম প্রবর্তন করা হয় ১৯৯৭-৯৮ সালে। তখন প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। তবে পরে তা দেশের সকল পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়।
২০০৯-১০ অর্থ বছরে এই সংখ্যা ২০ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার জনে করা হয়। তখন জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থ বছরে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ২৫ হাজার জন বৃদ্ধি করে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার জনে নিয়ে আসা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়।
বয়স্ক ভাতা কারা পাবে না?
- বয়স্ক ব্যক্তিটি সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হলে।
- প্রার্থী দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে।
- অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারী অনুদান বা ভাতা প্রাপ্ত হলে।
- কোনো বেসরকারি সংস্থা বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান বা ভাতা পেয়ে থাকলে।
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির উদ্দেশ্য কি?
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। নিচে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির কিছু উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলোঃ
- বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা।
- পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
- আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদার করা।
- চিকিৎসা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করা।
বয়স্ক ভাতার আবেদন করবেন কিভাবে?
গ্রামের হতদরিদ্র মানুষরা বয়স্ক ভাতার আবেদন সম্পর্কে সচেতন না। বয়স্ক ভাতার আবেদন অনলাইন কেন্দ্রিক হওয়াতে তাদের জন্য আবেদন করা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তারা চাইলেই তাদের আশেপাশের কারো সহযোগীতা নিয়ে এই আবেদনটা করতে পারবে।
অনলাইনে আবেদন করার সময় সতর্কতার সাথে ফরম পূরণের প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। তারপর প্রেরণ বাটনে ক্লিক করার আগে ভালো করে তা যাচাই করে নিন। অসতর্কতার জন্য কোন ভুল অথবা অসম্পূর্ণ আবেদন গ্রহণ করা হবে না। একটি ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন। পরবর্তী ধাপে প্রবেশের সাথে সাথে পূর্ববর্তী ধাপের পূরণকৃত তথ্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমে সংরক্ষণ করা হবে। বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে প্রথমে নিচে দেওয়া লিংকটিতে প্রবেশ করুন। তারপর বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন। http://online.forms.gov.bd/onlineApplications/apply/MzMvNS80MQ==/
বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম সম্পর্কিত তথ্য নিচে দেওয়া হলোঃ
- আবেদন ফরমের লাল তারকা চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অন্যান্য ঘরগুলো পুরণ ঐচ্ছিক।
- আবেদনের সময় যদি পেমেন্ট বা অর্থ পরিশোধের বিষয় থাকে তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং বা ই-চালানের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হবে।
- আবেদন ফরমে ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে। যেসব কাগজপত্র আবেদনের সাথে দাখিল করা প্রয়োজন, সেগুলো “সংযুক্ত” অপশনে ক্লিক করে আপলোড করতে হবে।
- “অফিস বাছাই করুন” অপশন হতে আবেদনটি যে অফিসে পাঠাতে চান সেই অফিস নির্বাচন করতে হবে।
- এরপর ‘প্রেরণ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। “আপনার আবেদনটি সফলভাবে প্রেরণ করা হয়েছে” এই মর্মে একটি বার্তা আসবে।
- আবেদন প্রেরণের পর আপনি একটি প্রাপ্তি স্বীকার মূলক পত্র পাবেন। এটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে “আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানা যাবে।
- আপনি আবেদন প্রেরণ না করা পর্যন্ত আপনার সিস্টেমে তা খসড়া হিসেবে সংরক্ষণ করা থাকবে। এটা পরবর্তীতে আপনি প্রেরণ করতে পারবেন।
বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরমে কি কি দিতে হবে?
বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরমে প্রার্থীকে অনেক গুলো বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। যেসব তথ্য দিতে হবে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
১) আবেদন ফরমের শুরুতে আবেদনকারীর বয়স উল্লেখ করতে হবে। আবেদনকারীর সঠিক বয়স না দিলে পরবর্তীতে আবেদনটি বাতিল বলে গণ্য করা হবে।
২) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত বয়স্ক ভাতার হার উল্লেখ করে আবেদনটি করতে হবে।
৩) আবেদনকারীর সঠিক নাম উল্লেখ করতে হবে।
৪) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
৫) আবেদনকারীর মাতার নাম ও পিতার নাম উল্লেখ করতে হবে।
৬) আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৭) আবেদনকারীর জন্ম তারিখ ও বাৎসরিক গড় আয় দিতে হবে।
৮) আবেদনকারীর আর্থসামাজিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা উল্লেখ করতে হবে।
৯) নমিনীর নাম উল্লেখ করতে হবে।
১০) সবশেষে আবেদনকারীর স্বাক্ষর দিতে হবে।
বয়স্ক ভাতা কোথা থেকে তুলবেন?
- আপনার উপজেলায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক না থাকলে অন্য কোনো তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা পরিশোধ করা হয়।
- যারা ভাতা পাবেন তাঁদের ছবিতে মেম্বার/প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ একটি পাসবই পাবেন, যেটার মাধ্যমে ভাতা তুলতে পারবেন।
- উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও সমাজসেবা কর্মকর্তার অফিসে বয়স্ক ভাতা প্রাপকের নাম, ছবি ও নমুনা স্বাক্ষরসহ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
- শারীরিকভাবে অক্ষম বা পর্দানশিন হওয়ার কারণে ভাতা গ্রহণের জন্য কেউ সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলে তিনি তাঁর পক্ষে একজনকে মনোনয়ন করতে পারবেন।
- মনোনীত ব্যক্তির ছবিতে মেম্বার/প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। ভাতা গ্রহণের সময় মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জীবিত আছেন, এই মর্মে স্থানীয় প্রতিনিধির সনদপত্র জমা দিতে হবে।
বয়স্ক ভাতা ফরম PDF
আপনি যদি অনলাইনে আবেদন করেন, তাহলে বয়স্ক ভাতা ফরমের প্রয়োজন হবে না। নিচে বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরমটি দেওয়া হলোঃ
আশা করছি, বয়স্ক ভাতা আবেদন সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তারপরেও আপনার যদি কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। আপনার দিনটি শুভ হোক।