ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত দুআ
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. সালাম ফিরানোর পরে কিবলামুখী হয়ে হাত উত্তোলন করে বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি মুক্তি দিন ওয়ালীদ বিন ওয়ালীদকে, আইয়াশ বিন আবী রবীআকে, সালামা বিন হিশামকে এবং সে সব দুর্বল মুসলমানদেরকে যারা কাফিরদের হাত থেকে মুক্তির কোন পথ বা পন্হা খুঁজে পায় না। (তাফসীরে আবু হাতিম: ছূরা নিসা:৯৮, হাদীসঃ (৫৯০৬)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ কিতাবের লিখক আবু হাতেম প্রসিদ্ধ হাফেজে হাদীস (তাকরীব-৬৪১৬)। তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বুখারী/মুসলিমের রাবীদের মাধ্যমে।
সারসংক্ষেপঃ এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুলাহ স. নামাযের পরে কিবলামুখী হয়ে হাত উত্তোলন করে দুআ করেছেন। সুতরাং নামাযের পরে এভাবে দুআ করা সুন্নাত।
ফায়দাঃ রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে সাহাবায়ে কিরামও দুআয় শরিক হয়েছিলেন কি না তা এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি। তবে সম্মিলিত দুআর প্রতি রসুলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ, (মুসনাদে আহমাদ-১৭১২১) আল্লাহ তাআলা সম্মিলিত দুআ কবুল করে থাকেন মর্মে ঘোষণা প্রদান করে উক্ত আমলের প্রতি সাহাবায়ে কিরামকে উৎসাহিত করা (তবারানী কাবীর:৩৪৫৬, মুসতাদরাকে হকেম: ৫৪৭৮, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১৭৩৪৭) এবং জুমআর খুৎবার সময় যখন রসূলুল্লাহ স. বৃষ্টির জন্য হাত উঠিয়ে দুআ করেছিলেন তখন সাহাবায়ে কিরামকে কিছুই না বলা সত্ত্বেও হাত উঠিয়ে রসূলুল্লাহ স.-এর দুআয় শরিক হওয়া (বুখারী-৯৭৩) ইত্যাদি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কিরামের বৈশিষ্ট ছিলো। রসূলুল্লাহ স.কে দুআ করতে দেখলে তাতে তাঁরা শরিক হতেন। সুতরাং উপরোক্ত হাদীস এবং রসূলুল্লাহ স.-এর দুয়ার সময় সাহাবায়ে কিরামের অমল থেকে এটাই অনুমেয় হয় যে, রসূলুল্লাহ স. ফরয নামাযের পরে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দুআ করতেন এবং সাহাবায়ে কিরাম সে দুআয় শরিক হতেন। অতএব, ফরয নামাযের পরে হাত উঠিয়ে সম্মিলিত দুআ মুস্তাহাব।
হযরত আলা বিন হাযরামী রা. ফজরের নামায পড়িয়ে সকল মুসল্লীদেরকে নিয়ে তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসে সুর্যোদয় পর্যন্ত হাত উত্তোলন করে দুআয় মশগুল ছিলেন। (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: বাহরাইনের মুরতাদদের আলোচনায়) আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বর্ণিত এ ঘটনাটি সনদসহ প্রায় হুবহু বর্ণনা করেছেন। আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহ. তাঁর ‘তারীখে তাবারী’ কিতাবে ‘বাহরাইনবাসী এবং তাদের মুরতাদ হওয়া’ এর আলোচনায় এবং ইবনে আছীর জাঝারী তাঁর ইতিহাসের কিতাব আল্ কামেলে। সব মিলিয়ে এ ঘটনাটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ হওয়ায় সাহাবার আমল থেকেও ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত দুআর প্রমাণ পাওয়া যায়।