জামাতের নামাযে কাতার সোজা করা এবং মিলে মিলে দাঁড়ানো

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: তোমরা কাতার সোজা কর, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও; মধ্যবর্তী ফাঁকা বন্ধ কর এবং তোমরা তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। (আবু দাউদ: ৬৬৬) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি নাসাঈ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩৮৬৬)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাকেম এবং ইবনে খুযাইমা রহ.-এর বরাত দিয়ে বলেন, উক্ত হাদীসটি সহীহ। (ফাতহুল বারী, অধ্যায়: কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাড়ানো)
হযরত আনাস রা. থেকেও কাতার সোজা করা এবং মিলে মিলে দাঁড়ানোর গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী-৬৮৪)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, কাতার সোজা করা, গায়ে গয়ে মিলে দাঁড়ানো এবং কাতারের মাঝে ফাঁকা না রাখা নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে গায়ে গায়ে মিলে দাঁড়ানোর নামে নিজের দু’পায়ের মধ্যে অনেক
ফাঁকা করে অন্যের পায়ের সাথে পা লাগানোর আমলকে রসূল স.-এর হাদীস বলে প্রচার করা হয়ে থাকে যা কোন ক্রমেই ঠিক নয়। এমনকি সাহাবায়ে কিরামের আমলেরও এটা প্রকৃত রূপ নয়। বরং মুসল্লীদের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে খুব বেশী মিলে দাঁড়ানো এবং ভালোভাবে কাতার সোজা করার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন “দুই পায়ের মাঝে স্বাভাবিক ফাঁকা রাখা” শিরোনাম।
সামনের কাতারে যায়গা থাকতে পিছনের কাতারে না দাঁড়ানো
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ করো; অতঃপর পরবর্তী কাতারগুলো পূর্ণ করো। যদি কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকে তা যেন শেষ কাতার হয়। (মুসনাদে আহমাদ-১৪ ৩৯, আবু দাউদ: ৬৭১) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ এবং ইবনে মাযা শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩৮৬৪)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং এ সনদটি অত্যন্ত মজবুত। (মুসনাদে আহমাদ-১৩৪৩৯ নং হাদীসের আলোচনায়)
হযরত জাবের বিন সামুরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ স. আমাদেরকে ফিরিশতাগণের কাতারের ন্যায় প্রথমে সামনের কাতারগুলো পূর্ণ করে গায়ে গায়ে মিলে দাঁড়ানো প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। (মুসলিমঃ ৮৫২)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করতে হবে। অতঃপর নতুন কাতার পূর্ণ হতে যতটুকু ঘাটতি থাকে তা যেন শেষের কাতারে থাকে।
একা এক কাতারে নামায না পড়া
হিলাল বিন ইয়াসাফ রহ. বলেন: আমরা রাক্কা নগরীতে থাকাবস্থায় হযরত যিয়াদ বিন আবুল জা’দ আমার হাত ধরে বনী আসাদের ‘ওয়াবিসা বিন মা’বাদ’ নামক এক শায়খের নিকটে নিয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি উক্ত শায়খকে শুনিয়ে
আমাকে বললেন: এই শায়খ আমাকে বলেছেনঃ এক ব্যক্তি কাতারের পিছনে একা নামায পড়ছিলো। রসূলল্লাহ স. তাকে পুনরায় নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন: ওয়াবিসার এ হাদীসটি হাসান-সহীহ। (তিরমিযী: ২৩০)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, একা এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়া মাকরূহ।
ফায়দা : সামনের কাতার পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর কেউ জামাআতে হাজির হলে সে যদি এ ব্যাপারে আশাবাদী হয় যে, কেউ না কেউ এসেই যাবে, তাহলে সে অপেক্ষা না করে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে। আর তার এ আশা না থাকলে
সামনের কাতার থেকে মাসআলা সম্পর্কে জানে এমন কাউকে টেনে পিছনের কাতারে এনে দু’জন এক কাতারে দাঁড়াবে। আর সামনের কাতারে মাসআলা সম্পর্কে জানে এমন কেউ না থাকলে অপারগতা বশতঃ একাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যাবে।