ছুটে যাওয়া নামায ধারাবাহিকভাবে আদায় করা
হযরত জাবের রা. বলেন: হযরত উমার রা. খন্দকের দিন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কুরাইশ কাফিরদেরকে গালমন্দ করতে লাগলেন এবং রসূলুল্লাহ স.কে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের নামায পড়তে পারিনি। রসূলুল্লাহ স. বললেন: আমিও পড়িনি। হযরত জাবের রা. বলেন: অতঃপর আমরা বুতহান নামক স্থানে গেলাম। সেখানে রসূলুল্লাহ স. নামাযের জন্য অযু করলেন এবং আমরাও অযু করলাম। এরপর তিনি সূর্যাস্তের পর আসরের নামায আদায় করে তারপর মাগরিবের নামায পড়লেন। (বুখারী: ৫৭১) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম, তিরমিযী এবং নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৩২৫৭)।
সারসংক্ষেপ : আসরের ওয়াক্ত পেরিয়ে সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে আসর পড়ার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাযের ওয়াক্ত পেরিয়ে গেলেও তার কাযা করা জরুরী। মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ স. আগে আসরের নামায পড়েছেন অথচ ওই ওয়াক্তের নামায আগে আদায়ের ব্যাপারে অগ্রগণ্য হওয়ার কথা। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কাযা আদায়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও জরুরি।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকেও হাসান সনদে খন্দকের যুদ্ধে নামায কাযা হয়ে যাওয়র উক্ত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। (তিরমিযী: ১৭৯) ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন: কিছুসংখ্যক আলিম এ মত গ্রহণ করেছেন যে, (অনেক ওয়াক্ত নামায কাযা হলে) প্রত্যেক ওয়াক্ত নামায আদায়ের সময় ইকামত দিতে হবে। ইমাম তিরমিযী রহ.-এর মন্তব্য থেকেও বুঝা যায় যে, সময়মতো নামায আদায় করতে না পারলে তা কাযা করা জরুরী। ছুটে যাওয়া নামাযের পরিমান বেশী বা কম হোক তা আদায় করার ব্যাপারে কোন ছাড় কুরআন-হাদীসে খুঁজে পাওয়া যায় না। ওয়াক্ত পার হয়ে গেলেও যেহেতু উক্ত নামাযের কাযা আদায় করার সুযোগ রয়েছে তাই নামায না পড়ে তওবা করলেও তওবার বিধান অনুযায়ী আদায়যোগ্য ইবাদাত আদায় করে সময়মতো না পড়ার কারণে তওবা করতে হবে। কাযা আদায় না করে শুধু তওবার দ্বারা ক্ষমা হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ স. এবং সাহাবায়ে কিরাম সারা দিনের যুদ্ধক্লান্ত অবস্থায় খন্দকের যুদ্ধে ছুটে যাওয়া নামায আদায় না করে শুধু তওবা করে শেষ করে দিতে পারতেন।
ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করার বিষয়ে হযরত ইবনে উমার রা. থেকে স্পষ্ট একটি সহীহ হাদীস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী: ৩৩৯৩ এবং দারাকুতনী: ১৫৭৮ ও ১৫৭৯ নম্বরে বর্ণিত হয়েছে। তবে কাযা নামাযের কথা ভুলে গেলে, অথবা কাযা নামাযের পরিমাণ অনেক বেশী হওয়ায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব না হলে কিংবা সময় সংকীর্ণতার কারণে ওয়াক্তের নামাযও ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী হবে না।
যানবাহনে নামাযের পদ্ধতি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. সলাতুল খওফ বা ভীতিকর অবস্থার নামাযের বিষয়ে বলেন, যদি ভয় প্রচুর আকারে দেখা দেয় তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অথবা যানবাহনে আরোহন করে কিবলামুখী হয়ে বা না হয়ে (সম্ভবমতো) নামায আদায় করবে। (বুখারী: ৪১৭৯) শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাযা শরীফেও বর্ণিত হয়েছে।
ফায়দাঃ বুখারী শরীফের এ হাদীসটি সলাতুল খওফ বা ভীতিকর অবস্থার নামাযের ব্যাপারে বর্ণিত। তবুও এ থেকে কিছু দিকনির্দেশনা মিলবে। কেননা শত্রুর ভয় না হলেও গন্তব্যে পৌঁছতে না পারার আশঙ্কা, গাড়ী ছেড়ে দিলে পথে বিপদে পড়ার ভয় সবই এর সাথে যুক্ত আছে। অতএব, ভীতিকর অবস্থার নামায থেকে দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে। যানবাহনের নামায আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো: যানবাহনে যদি ভিতরে থেকে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে যথানিয়মে নামায পড়ার কোন সুযোগ থাকে, তাহলে ভিতরে থেকে যথানিয়মে নামায আদায় করবে। আর যদি যানবাহনে ভিতরে থেকে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে যথানিয়মে নামায পড়ার কোন সুযোগ না থাকে, তাহলে প্রথমে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে যানবাহন থেকে নেমে যথানিয়মে নামায আদায় করতে । একান্ত নামার কোন সুযোগ না থাকলে বা নামলে গাড়ী চলে যাবে; তখন গন্তব্যে পৌঁছতে বেগ পেতে হবে- এ ধরনের সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে গাড়ির ভিতরে যেভাবে সম্ভব নামায পড়ে নিবে। এরপর গাড়ী থেকে নামার পরে সতর্কতামূলক উক্ত নামায আবার আদায় করে নিবে।