কাদিয়ানীরা কাফের কেন ?

ভারতবর্ষ দখলের পর থেকে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠিকে বারংবার মুসলমানদের আন্দোলন-সংগ্রামের মোকাবেলা করতে হয়েছে। ১৮৫৭ সালের বালাকোটের যুদ্ধ, জামালউদ্দীন আফগানীর ‘ইত্তেহাদে ইসলাম’ এর অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন এলাকার মুসলমান কর্তৃক ইংরেজ বিরোধী যুদ্ধ দেখে তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা দিশেহারা হয়ে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য মুসলমানদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা এমন একজন লোক খুঁজতে থাকে যে, নিজেকে ছায়া নবী বলে আত্মপ্রকাশ করবে। তার নবুওয়াতকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দান ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। এতে মুসলমানদের মধ্যে থেকে কিছু ধর্মজ্ঞানহীন ও কিছু লোভী মানুষ না বুঝে বা স্বার্থের টানে তার অনুসরণ করবে। তখন মুসলমানদের লড়াই উক্ত ছায়া নবী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে হবে। আমাদের বিপক্ষ্যে লড়ার কোন সুযোগ তারা আর পাবে না। (কাদিয়ান ছে ইসরাঈল তক)। অবশেষে তাদের কুটকৌশল সফলতা আসে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্গত গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান শহরে জন্মগ্রহণকারী মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সন্ধান পেয়ে। ইংরেজ সরকারের পরিকল্পনা মাফিক তাকে দিয়ে নবুওয়াতির ঘোষণা করায় এবং সার্বিক সাহায্য করতে থাকে। এভাবেই পাক-ভারত উপমহাদেশের কলঙ্ক মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর মিথ্যা নবুওয়াতী ফেৎনার সূচনা ঘটে। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের দাবী করেছে। কখনো মুবাল্লিগ, কখনো মুজাদ্দিস, কখনো মাহদী, কখনো মাসীহ (ইসা) আবার কখনো নবী। তবে তার দাবীসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দাবী হলো নিজেকে শেষ নবী দাবী করা। কেননা তার প্রত্যেকটি দাবী যদিও কুরআন-ছুন্নাহ বিরোধী তবে মুহাম্মাদ স.-এর শেষ নবী হওয়ার বিষয়টি কুরআন-ছুন্নাহয় এত ব্যাপক ও সুস্পষ্টভাবে দৃঢ়তার সাথে বর্ণিত হয়েছে যে, এ বিষয়ে কারো না বুঝা বা ভিন্নটা বুঝার সুযোগ নেই। কুরআন-ছুন্নাহ থেকে কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হচ্ছে।
কাদিয়ানী_কাফের
কাদিয়ানী কাফের 

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিষয়ে কুরআন-ছুন্নাহর সিদ্ধান্ত

দ্বীনদরদী মুসলিম ভাইয়েরা! খতমে নবুওয়াতের আক্বীদাসহ শরীআতের আরো বেশকিছু আক্বীদা আপনাদের সামনে পেশ করা হল; কাদিয়ানী সম্প্রদায় যেগুলোকে অস্বীকার করে এবং ভিন্নমত পোষণ করে। এ ধরণের ধ্বংসাত্মক আক্বীদা তো দূরের কথা এর চেয়ে হালকা আক্বীদার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করাও ঈমান হরণের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং এহেন জঘন্য আক্বীদা পোষণকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অমুসলিম হওয়ার বিষয়টি বুঝতে হয়তো কারো বেগ পেতে হবে না। ১৯৭৪ সালে মক্কা শরীফে রাবেতা আলমে ইসলামী সংস্থা এর উদ্যোগে ১০৪টি মুসলিম দেশের ১৪০টি ইসলামী সংগঠনের সমন্বয়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে চারদিনব্যাপী এক তথ্যানুসন্ধানী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কনফারেন্সে তাদের যাবতীয় আক্বীদা-বিশ্বাস ও কর্মতৎপরতার উপর সুদীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনা শেষে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা নিম্নে প্রদত্ত হল।
১। বিশ্বব্যাপী এ কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফের এবং ইসলামের গন্ডির বাইরে।
২। বিশ্বব্যাপী সকল ইসলামী দল ও সংগঠনের দায়িত্ব হবে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, শিক্ষালয়, এতিমখানা এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অফিস আদালত চিহ্নিত করে তাদের চক্রান্তের জাল থেকে আত্মরক্ষা করা এবং বিশ্ববাসীর সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা।
৩। আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতাসহ তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান বন্ধ করে দেয়া। তারা যেহেতু কাফের, তাই তাদের সাথে বিবাহ-শাদীর সম্পর্ক স্থাপন না করা। এমনকি মুসলমানদের কবরস্থানে কাদিয়ানীদের লাশও দাফন করতে না দেওয়া।
৪। তারা কুরআন মাজিদের যে অপব্যাখ্যা করেছে সে ব্যাপারে সাধারণ মুসলমানদের সতর্ক করা এবং তাদের প্রচারণা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। উল্লেখ্য-রাবেতা আলমে ইসলামী সংস্থার উল্লেখিত সিদ্ধান্ত অনেক দেশ ও সংস্থা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে।

কাদিয়ানীদের সঙ্গে মুসলমানদের আচরণ কেমন হবে?

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত আক্বীদাকে সামনে রেখে কুরআন-ছুন্নাহর আলোকে সমস্ত উম্মতে মুসলিমা এ সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। তারা কুফরী আক্বীদার উপর ইসলামী লেবেল লাগিয়ে মূল ইসলামের নামে চালানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। শুধু তাই নয় বরং চৌদ্দ’শ বছর যাবত বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার পরেও যারা আসল ইসলামকে বুকে ধারণ করে আছে তাদেরকে কাফের বলার মত দুঃসাহসও দেখিয়েছে। সুতরাং সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য এক অপরিহার্য দায়িত্ব হল খতমে নবুওয়াতের আক্বীদাকে আঁকড়ে ধরা। রসূল স.-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্য কাদিয়ানীদেরকে প্রতিহত করা। তাদের সাথে যে কোন ধরণের সহযোগিতা পরিহার করা; যদিও সে আপনজন হয়। আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা যে,”আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এমন কোন সম্প্রদায়কে আপনি পাবেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে; যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের বংশের লোক হয়।” (ছূরা তাওবা-২২)

কিছু প্রয়োজনীয় মাসআলা

১। কাদিয়ানী পুরুষের সাথে মুসলমান মেয়েদেরকে বিবাহ দেয়া হারাম। তেমনিভাবে কাদিয়ানী মেয়েদেরকে মুসলমান পুরুষের জন্য বিবাহ করাও হারাম।
২। জেনে বুঝে বিধান লংঘনকারীর ঈমান নবায়ন করতে হবে।
৩। কাদিয়ানীদের আক্বীদা জানা বুঝার পরও তাদেরকে মুসলমান বলে বিশ্বাস করা কুফরি।
৪। কাদিয়ানী কর্তৃক জবাইকৃত প্রণীর গোশত ভক্ষণ করা হারাম।
৫। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার যানাজা পড়া অবৈধ।
৬। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কোন মৃত ব্যক্তিকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা অবৈধ।
৭। কাদিয়ানীদের বানানো উপাসনালয় শরীয়াতের দৃষ্টিতে মসজিদ নয়।
প্রচারে : আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশ, মাগুরা জেলা শাখা।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *